আমার মত তরুণ এবং নতুনদের প্রতি ছোট একটা অনুরোধ।
আপনারা অনেকেই বড় ভাই বা বোনদের দুই একটা ব্লগ পড়ে বা ভিডিও দেখে হয়তো বুঝে গেছেন ‘ধর্ম ভুল’। অনেকেই আপনাদের তিরস্কার করে বলবে, ” ঐ দেখো, দুই একটা ভিডিও আর ব্লগ পড়ে নাস্তিক হয়ে গেছে, আহারে! নাস্তিকতা এখন কেজির ধরে বিক্রি হয়।”
এইসব শুনে মন খারাপের কিছু নাই। সবার কথা শুনতে হবে এমন কোনো কথা তো নেই। তবে হ্যাঁ, কারও কথা ফেলে দিবেন না। সে যাই বলুক, মাথায় রাখবেন। ভাববেন, লোকটা কেনো এ কথা বললো।
যাই হোক, দুই একটা ব্লগ পড়ে বা ভিডিও দেখে ‘ধর্ম ভুল’ এটা বুঝে যাওয়া তো প্রশংসনীয় কাজ। মনে করে দেখেন তো, ক্লাসে যে স্টুডেন্ট’কে একবার বুঝালে অংকটা বুঝে যেতো তাকে কি কেউ তিরস্কার করে? করে না। তবে আপনাকে কেউ তিরস্কার করলে কেনো আপনি মন খারাপ করবেন? একদম মন খারাপ করবেন না। যারা তিরস্কার করছে তাদের বুঝার ভুল। খুব কম মানুষের মস্তিষ্ক অল্পতে বুঝতে পারে। আপনি সেই অল্প মানুষের একজন। আপনার এই মস্তিষ্কের জন্য- আমি আপনার প্রশংসা করি। তবে হ্যাঁ, এখানে কিছু কথা আছে।
ধর্ম হলো, দরজা জানালা বন্ধ একটা ঘরের মত। আপনার মা-বাবা এবং তাদের মা-বাবা অর্থাৎ চোদ্দগোষ্ঠির গোষ্ঠি; বছরের পর বছর এই ঘরে বন্দী ছিলো। তাই আপনার জন্মের পর থেকে আপনিও ঐ ঘরে বন্দী হয়ে পড়েন। এরপর কোনো একভাবে বুঝতে পারলেন ‘আপনি বন্দি’! আপনি ছটফট করছেন এই বন্দিত্ব থেকে মুক্তি নিতে। এবার আপনি দরজা জানালা বন্ধ ঘরটির দরজায় এসে দাঁড়ালেন। আপনি এখনই দরজাটা খুলবেন বলে মনস্থির করেছেন। ঠিক এই মুহূর্তে আমি আপনাকে থামিয়ে দিবো। আমি বলবো ঠিক এখনই আপনি দরজাটা খুলবেন না।
নিজেকে প্রশ্ন করুন। বছরের পর বছর আপনি একটা ঘরে বন্দি ছিলেন। হঠাৎ করে একদিন বুঝতে পারলেন ‘আপনি বন্দী’। আপনি এই জীবনে কখনও আলো দেখেন নি। দরজাটা খোলার সাথে সাথে যে অালোটা আপনার চোখে এসে পড়বে সেই আলোর সামনে দাড়ানোর মত শক্তি কি আপনার আছে? নিজেকে প্রশ্ন করুন।
বিশ্বাস করুন, এই আলোটার সামনে আপনাকে একা দাঁড়াতে হবে। কাউকে পাশে পাবেন না। মা-বাবা, ভাই-বোন অথবা ঐ যে যাদের কারণে বুঝতে পেরেছেন আপনি বন্দি, এরা কেউই আপনার পাশে থাকবে না। এই সময় যে মানসিক সাপোর্ট প্রয়োজন তাও পাবেন না। তাই দরজাটা খোলার আগে ভাবুন, নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনার কি সেই টুকু শক্তি হয়েছে অালোটার মোকাবেলা করার মত?
এই সময়টায় এসে সবারই মনে হয়, সে অনেক কিছু জেনে গেছে। আসলে কিছুই না; শূন্য! তাই আমি আপনাকে অনুরোধ করবো ঠিক এখনই দরজাটা খুলবেন না। প্লিজ! খুলবেন না। স্থির হয়ে বসেন।
আপনার সবচেয়ে বড় পাওয়া কি জানেন?
আপনি বুঝে গেছেন যে, ‘আপনি বন্দী!’ বিশ্বাস করুন অথবা যাচাই করে দেখুন, এই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ জানেই না ‘তাঁরা বন্দী’! সেখানে আপনি বুঝেছেন ‘আপনি বন্দি’। এটা অনেক বড় পাওয়া -আমি মনে করি! এবার আপনার কাজ হলো, সেই বন্দী ঘরে স্থির হয়ে বসা। হ্যাঁ, একদম স্থির হয়ে বসতে হবে। নিজেকে তৈরি করতে হবে, ভাবতে হবে কত কৌশলে বন্দি ঘরটি থেকে বের হওয়া যায়। শুধু নিজে বের হলে তো হবে না। নিজের চারপাশের মানুষকেও এই বন্দিদশা থেকে বের হওয়ার জন্য তাদের পাশে থাকতে হবে। তাই হঠাৎ করে দরজাটা না খুলে ধৈর্য ধরুন।
আর যদি নিজেকে তৈরি করার আগে ভুল করে দরজাটা খুলে ফেলেন, তবে আপনার অবস্থা হবে ‘আমার মত’!
কাউকে পাশে পাবেন না। যে মানুষ গুলো আপনাকে ছাড়া রাতে খাবার টেবিলে বসতো না, বিশ্বাস করুন রাতারাতি তাঁরা আপনার থেকে বহু বহু দূরে চলে যাবে। আত্নীয়স্বজনদের কথা ভাবছেন? আপনার অসুখবিসুখ হলে ছুটে আসতো আপনাকে দেখতে। আপনি তাদের অনেক আদরের, তাই না? কেউ থাকবে না পাশে। শুধু থাকবে তাদের তিরস্কার! প্রতিবেশিদের কথা ভাবছেন? এরা আপনার বাড়ির লোকদের রাস্তায় দেখলে থুথু মারবে। বলবে দেখো দেখো, নাস্তিকের বাড়ির লোক। আপনার বন্ধুদের কথা ভাবছেন? এরা এক অন্য জগতের প্রাণি! দেখবেন- যে বন্ধুরা আপনার মা বোনকে নিজের মা বোনের মত সম্মান দেখাতো তারাই আপনার ইনবক্সে এসে আপনার মা বোনকে ধর্ষণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করবে। কিচ্ছু করার নেই, নির্বাক হয়ে শুধু দেখতে হবে। কেউ কেউ ফোন করে আপনাকে হত্যা করার ইচ্ছে প্রকাশ করবে। কেউ কেউ বলবে, ” তুই কি করে এলাকায় থাকিস আমরা দেখে নিবো”।
যে মানুষটি আপনাকে বলতো, “তুমিই আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ! তোমার একটু স্পর্শে আমি চারশ ওয়াট বাল্বের মত জ্বলে উঠি।”…. বিশ্বাস করুন, এক মুহূর্তের মধ্যে সেই মানুষটার কাছে আপনি অপ্রিয় হয়ে উঠবেন। সে আর আপনার স্পর্শে জ্বলে উঠার শক্তি পাবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নিয়ম করে সেজদা দেয়া কারও স্পর্শে জ্বলে উঠবে! চারশ ওয়াট বাল্বের মত! আপনার পৃথিবী ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে আসবে।
তাই বলছি আপনাকে, এখনই দরজাটা খুলে বেরিয়ে আসার দরকার নেই। আগে নিজেকে তৈরি করুন। বের হওয়ার সময়তো আর চলে যাচ্ছে না। আপনার মনের কথা গুলো প্রকাশ করুন কৌশলে। ভুল করবেন না, একবার চিহ্নিত হয়ে গেলে জীবনটা অস্বাভাবিক হয়ে যাবে। মুক্ত হতে গিয়ে বন্দী হয়ে যাবেন। চাইলেও আর স্বাধীন ভাবে চলতে পারবেন না। মাথায় ভয় নিয়ে কি আর স্বাভাবিক ভাবে চলা যায়? তাই দরজাটা সরাসরি না খুলে বরং বন্দী ঘরে বসে যুক্তির আঘাতে দরজাটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ভেঙ্গে ফেলুন। নিজেকে তৈরি করুন। এটা অনুরোধ।
অতিরিক্ত কথা:-
১. আমরা কেউই মুক্ত না। একটা ঘর থেকে বের হয়ে মনের অজান্তে আরেকটা ঘরে বন্দী হই। আমরা কেউই মুক্ত না। সকলেই কোন না কোন ঘরে বন্দী।
২. আমার মনে ধর্মের প্রতি সন্দেহ প্রবেশ করেছিলো আমার শিক্ষকের হাত ধরে। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। রেললাইনের রাস্তা ধরে আমরা শহর থেকে বেরিয়ে যেতাম। তার সাথে আড্ডা দেয়ার মত মজা কোথাও পাইনি। তখন আমি অষ্টম শ্রেণীতে। তারপর ইন্টার শেষে সরাসরি ধর্ম ত্যাগ করি। যা উনি পছন্দ করেন নি। সে থেকে যোগাযোগ নেই। উনি নিশ্চয়ই এত দিনে আমায় ক্ষমা করেছেন।