একটু আগে ভারতের কোন এক স্থানে গরুর মাংস কিনতে গিয়ে বৈষম্যের শিকার (Victim) হলাম।
এক দোকানে খাসির মাংস বিক্রি করছে। আমি গিয়ে বললাম, “আমার গরুর মাংস লাগবে।”
দোকানদার লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ গরম করে বললো, “এখানে ওসব পাওয়া যায় না”
আমি বললাম, “কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারেন?”
লোকটা আমাকে উদ্দেশ্য করে পাশের লোকটাকে বললো, “মুসলিমের বাচ্চাগুলা কি গরু ছাড়া কিছু বোঝে না! ”
“মুসলিমের বাচ্চা” বলার কারণে লোকটাকে বললাম, “খাসির যেমন একটা প্রাণী, গরুও তেমনই একটা প্রাণী। গরু খাওয়ার কারণে যদি আপনার কষ্ট হয় তবে খাসি খাওয়ার কারণেও আপনার কষ্ট হওয়া উচিত।”
এরপর লোকটা আমাকে আবারও “মুসলিমের বাচ্চা” বলে বকাবকি করলো। এমন অবস্থা যে এক্ষুণি লোকটা আমাকে অাক্রমণ করবে।
ভীষণ মন খারাপ হলো আমার।
এরপর আমি আর অসভ্য লোকটার সাথে কথা না বাড়িয়ে এলাকা ঘুরে একটা মুসলিম মালিকের দোকান খুঁজে বের করলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম,”গরুর মাংস কোথায় পাবো? ” মুসলিম দোকানদার লোকটা আমাকে মুসলিম ভেবে খুশি খুশি মুখ করে মার্জিত ভাষায় দেখিয়ে দিলো কোথায় গরুর মাংস পাবো।
এই যে মুসলিম লোকটা খুশি খুশি মুখ করে মার্জিত ভাষায় দেখিয়ে দিলো এবং অন্য দিকে হিন্দু লোকটা গরুর মাংস কোথায় পাবো জিজ্ঞেস করায় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলো, এই দুইজন ব্যক্তির মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই।
এখানে হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসী লোকটা দ্বারা আমি বৈষম্যের শিকার হলাম, একই সাথে ইসলাম ধর্মবিশ্বাসী লোকটা দ্বারাও আমি বৈষম্যের শিকার হলাম। কারণ মুসলিম লোকটা আমাকে মুসলিম ভেবে ভাল ব্যবহার করেছে। এটা আমার প্রতি বৈষম্য। সে যদি জানতো আমি নানান জায়গায় ইসলামের সমালোচনা করি বা তাকে যদি আমি জিজ্ঞেস করতাম শুকুরের মাংস কোথায় পাবো তবে সে আমার সাথে ভাল ব্যবহার করতো না। তাই উভয়ের দ্বারা আমি বৈষম্যের শিকার হলাম।
তখন থেকে মনটা ভীষণ খারাপ। প্রাণী হত্যা করতে আমার কষ্ট হয় তবুও ছোট বেলা থেকে খেয়ে আসা লোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। যদিও নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা নিয়ে আমি অনুতপ্ত, বিবেক-দংশনে ক্ষতবিক্ষত। চেষ্টা করি কম খেতে। কিন্তু “একজন পারবে আরেকজন পারবে না” সভ্য সমাজে এমন বৈষম্য থাকতে পারে না।